এম, এ কাশেম,
বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম:
সারা দেশের মতো দেশের প্রধান বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অবরোধ বিক্ষোভ কর্মসূচির মতো আগে থেকে ‘স্থান’ না জানালেও শুধুমাত্র হাসপাতাল জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সড়কে কোনো গাড়িও চলতে মানা রয়েছে তাদের।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের হাতে কোনো প্রকার সহিংসতা হলে তা ‘শক্ত হাতে’ প্রতিহত করার কথা জানিয়েছেন সরকারদলীয় অঙ্গ সংগঠন গুলো।
যুবলীগের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যো ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে-যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে যুবলীগ প্রস্তুত রয়েছে।
এ ছাড়া ‘মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সমাবেশ’ ডেকেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।অন্যদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত থাকার কথা বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় চার মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮ জনকে।
অপরদিকে আন্দোলনে সমর্থন দিলে ও ‘মাঠে’ থাকবেন কিনা তা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অন্যান্য রাজনৈতিক দলীয় নেতারা।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি সংবাদ মাধ্যম কে বুধবার রাতে বলেন, ‘শাটডাউন কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না। আর অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। চট্টগ্রামের কর্মসূচির সময় এবং স্পট বৃহস্পতিবার সকালে ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জামায়াত, শিবির কিংবা বিএনপি অনুপ্রবেশ করে কোনো ধরনের সহিংসতা করলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম।তিনি বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ছাদ থেকে ফেলে, গুলি করে এবং ছুরিকাহত করে আমাদের অন্তত ৬০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।বৃহস্পতিবার কোটাবিরোধী আন্দোলন কারীরা নগরীর বড়পোলে মিছিল করবে। আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আশেপাশেই অবস্থান নেবে। কাল আমাদের সবাই নামবে।সাধারণ ছাত্রদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ তুলে দিদারুল বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিছনে থেকে বিএনপি এবং জামাত নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে আমরা তা শক্তহাতে প্রতিহত করবো। জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো কাল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জামায়াত এবং বিএনপির ক্যাডারের যোগ দিয়েছে। সাধারণ ছাত্ররা সহিংস হলেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাজপথে নামবে—এটা আশা করা যায় না।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপির পূর্ণ সমর্থন আছে জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রতি বিএনপি’র পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
তবে শিক্ষার্থীদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। এর বাইরে আমাদের আলাদা করে আর কিছু বলার নেই।গরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমাদের নিয়মিত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ফোর্স মোতায়েন বাড়ানো হতে পারে। গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় তিনটি এবং খুলশী থানায় একটিসহ মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সমাবেশ করবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।